রবিবার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
প্রচ্ছদগারো ব্লগসলেখালেখির প্রয়োজনীয়তা | কিভাবে, কারা লেখক হয়ে উঠে

লেখালেখির প্রয়োজনীয়তা | কিভাবে, কারা লেখক হয়ে উঠে

লেখালেখির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মহা মণীষীরা বলেন, একজন লেখক হচ্ছেন জাতির বিবেক। এই প্রশ্নে কারোর দ্বি-মত থাকার সুযোগ নেই। পাশাপাশি একজন লেখক হচ্ছেন লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সমালোচক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, গীতিকার, সুরকার এবং দার্শনিক ইত্যাদি।

একজন গল্পকার হতে যেমন কল্পনা প্রবনতার প্রয়োজন; ভালো লেখক হতে হলে অগাধ জ্ঞান থাকা বাঞ্চনীয়। সভ্যতা, সংস্কৃতি, ভাষা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পরিসরে মৌলিক এবং গবেষণা লব্ধ জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

বিশ্লেষণ করার মতো প্রচন্ড দাপত, দক্ষতা, কাব্যিক সৌখিনতা থাকতে হবে। থাকতে হবে যুক্তি নির্ভর মতামত ব্যক্ত করার অসামান্য দৃপ্ততা। একজন লেখককে হতে হবে বাস্তব এবং ভবিষ্যতের প্রবক্তা। তিনি হবেন প্রগাঢ় চিত্তের মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন একজন সূদিপ্ত মানবী লেখক।

একদম সহজ কথায়- যাঁরা নিয়মিত, অনিয়মিত লেখেন তিনি-ই লেখক। আরও জেনে রাখা ভালো, নিয়মিত অধ্যয়ন করে নিয়মিত লিখলে লেখক হওয়া যায় এবং ভালো লেখক হবার একমাত্র পূর্ব শর্ত।

বলছিলাম, লেখালেখি বিষয়টি একদিনে হয়ে উঠে না। রীতিমতো অনুশীলন এবং একটি জ্ঞানলব্ধ সাধনা। লেখালেখি, শিল্প সাহিত্যের সাথে সখ্যতা অনেকের শৈশব থেকে। আবার কারোর মাঝামাঝি অথবা আয়ুস্কাল শেষের দিকে; কোন এক বিশেষ পরিস্থিতে লেখা শুরু করে থাকে।

লেখকের বাঁধাধরা বয়স নেই; লেখার নেই নির্ধারিত কোন বিষয়বস্তু। অর্থাৎ মুক্তমনা যে কেউ লেখালেখি শুরু করতে পারে। আর সে কারনে শুধু সখ্যতা বললে ভুল হবে; শিল্প, সাহিত্যর প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা থাকা বাঞ্চনীয়। কাজের প্রতি একনিষ্ঠ হয়েই শ্রদ্ধাস্বরূপ তুলে নিয়ে আসে বস্তুনিষ্ঠু লেখা। এরপর রীতিমতো তাঁরা নেশা এবং পেশাকে আগলে রেখে লিখে চলেন দিনের পর দিন, এবং আজীবন।

লেখালেখির প্রয়োজনীয়তা কেন?

কোন লেখা পঠনের পর অবচেতন মনে যে অনুভূতি বা বোধের সৃষ্টি হয়, তা প্রকাশ করতে না পারলে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করে নিজের ভেতর। যদিও একজন লেখকের সৃষ্টি, ইতিহাস নিয়ে কিছু লিখা বা মন্তব্য করা দুরূহ একটি ব্যাপার। তবুও সেই গভীর তাড়না থেকেই ‘গারো লেখকদের ইতিহাস’ নামক প্রবন্ধের অবতারনা হয়।

প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে একেকটি গল্প, লেখক জীবনের একেকটি দ্বার খুলে দিচ্ছে। তাঁদের জীবনের প্রতিটি গল্পই গভীরভাবে ভাবার বিষয় আছে।

উপলব্ধিকে নতুন আঙ্গিকে অনুভব করতে শিখিয়েছে আমাকে। তাঁদের গল্পের উঠোনজুড়ে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো যায়। তাঁদের গল্প, উপন্যাস, কবিতা, নাটকে মানবতার জীবন্ত ছবি দেখি। সেই সঙ্গে মানবতার অপমৃত্যু কিংবা মানবতাকে রক্তাক্ত হতেও দেখি।

মানুষ হয়েও মানবতাকে ধারণ করতে পারছি না এ আমাদের চরম ব্যর্থতা, বিষণ্ণতা, হাহাকার। যান্ত্রিকতার যুগে মানবতা যেন বিরল একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ! অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছি। আবার অনুরোধে ঢেঁকি গেলার মতোও অনেকে রাত-দিন অন্যায় আর পাপকে হজম করে চলেছি দিনের পর দিন এবং রাতের পর রাত। ঠিক এমন কিছু লেখক তার উপলব্ধিকে সহজ-সরল ভাষায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেন নানা ভঙ্গিমায় এবং নানা চরিত্রে।

একজন লেখকের গুরুত্ব

তরুণরা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং তারা-ই জাতির ভবিষ্যত। বাস্তবে যা দেখি বর্তমানে তরুণদের ভেতর বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস কমে যাওয়ার পথে। একজন আদর্শ বন্ধু আরেক বন্ধুর পুরো জীবনকে কীভাবে বদলে দিতে সক্ষম তারই চমৎকার উদাহরণ উঠে আসে লেখকের লেখনীতে।

আপনার লেখনীতে পাঠকের মনের ভেতর ভিন্নভাবে নাড়া দিতে পাড়ে। একজন লেখকের লেখনীতে ব্যক্তি জীবনের সমস্যা কিংবা তার সাংসারিক জীবনের ভুল বোঝাবোঝির বিষয়গুলো একটি গল্পের মাধ্যমে সুন্দর করে তুলে ধরা সম্ভব এবং এ কাজটি একজন লেখক-ই পাড়ে চিত্রায়িত করতে। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসা একজনের প্রকৃত লেখক হওয়ার ইচ্ছায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একজন আদর্শ জীবন সঙ্গিনী লেখক হওয়ার পথটাকে কিভাবে সহজ করে দেয়। এমন কিছু জীবন কাহিনী বা গল্পটি আপনার আমার চেতনাকে নাড়া দিতে পারে, মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে আপনার পথ চলা। সমাজের ক্ষমতাশীল ও ধনাঢ্য মানুষগুলো নিম্ন পদস্থদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে, আমাদের সমাজে এ এক চিরচেনা দৃশ্য।

লেখকের লেখা সমাজের বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসার পথ দেখায়

সমাজে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া এ বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সময় এসেছে বৈষম্যের বাঁধ ভেঙে দেওয়ার। সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য এবং সূক্ষ্ণ পার্থক্যগুলোর মধ্য দিয়ে লেখক সৃষ্টি করেন একটি বিরল দৃষ্টান্ত। তখন আপনার উপলব্ধির জায়গা থেকে লেখককে শ্রদ্ধা জানাতেই হবে।

বর্তমান সময়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ড ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। অপরাধের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে রোজ। আজ যা অন্যের জীবনে ঘটছে, আগামীকাল তা আমার জীবনেও ঘটতে পারে। তাই অপরাধকে এড়িয়ে যাওয়া মানে নিজের জন্য আশঙ্কার পথ তৈরি করা।

এমনি উপলব্ধির স্পর্শ খুঁজে পাওয়া যায় লেখকের লেখনীতে, নানা গল্পে, সাহিত্যে। স্বাভাবিকভাবেই একজন লেখকের গল্পে, সাহিত্যে ভালোবাসার একটি মানচিত্র দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়। বিশ্বাস আর শ্রদ্ধাবোধের সমন্বয়ে প্রকৃত ভালোবাসা গড়ে ওঠে। যে ভালোবাসা ঠুনকো হবে না, হবে চিরন্তন। তাদের চরিত্রের মাধ্যমে সময়ের পরিক্রমায় নারীর জীবন ও অবস্থান পরিবর্তনের বাস্তবচিত্র তুলে ধরেন।

অজ্ঞতা আর বৈষম্য সমাজের জন্য, জীবনের জন্য কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। লেখক হিসেবে অত্যন্ত সচেতনতার পরিচয় দিতে হয় একজন লেখকের।

ভালোবাসা একটি নিজস্ব উপলব্ধির বিষয়। প্রকৃত প্রেম, দ্ব্যর্থহীন ভালোবাসা মানুষের মন ও মনন থেকে দিনকে দিন সটকে পড়ছে। মানুষ এখন ভালোবাসার পেছনে যুক্তি দাঁড় করাতে চায়।

লেখালিখি যেভাবে সমাজের উন্নতি করে

জীবনের প্রয়োজনে, ব্যক্তিক কারণে ভালোবাসে। সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারী অবমাননার নির্মম সাক্ষী বহন করে চলেছে। প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললে-ই নারী নির্যাতন-ধর্ষণ-খুনের খবর চোখে পড়ে। আমরা পড়ছি, দেখছি অথচ অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

আমাদের ঘুনে ধরা বিবেককে নাড়া দিতে-ই লেখক বাস্তবতা আর কল্পনার সমন্বয়ে চমৎকার গল্প, কাব্য, সাহিত্য লিখে ফেলেন। যান্ত্রিকতার প্রভাবে মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে কতটা কঠিন করে তুলছে, কতটা বাস্তববাদী করে তুলছে তারই প্রমাণ মেলে লেখকের লেখায়।

চলার পথে রোজ কত অচেনা মানুষের সাথে আমরা পরিচিত হই। অচেনা মানুষগুলো কখনো প্রত্যাশা ছাপিয়ে আপন হয়ে যায়। সেই ভালোলাগাগুলো স্মৃতি হয়ে মানুষকে ক্ষণে ক্ষণে ভাবিয়ে তোলে। স্বপ্নের জায়গা খোঁজে। আবার গল্পকার পাঠকের ভালোবাসা-ই যে একজন লেখকের বেড়ে ওঠার শক্তি চরম সে সত্যটি আমরা উপলব্ধি করতে পারি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক ফেক প্রেমের সূচনা হলেও কখনো যে প্রকৃত প্রেমও সৃষ্টি হয় সেই ইতিবাচক, নেতিবাচক দুটো দিকই লেখক তুলে ধরে থাকেন। দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি চমৎকার গল্প, উপন্যাস হতে পারে।

একজন মুক্তিযোদ্ধার চাওয়া-পাওয়া, মনের সুপ্ত ইচ্ছাকে ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে। এদেশের মানুষের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘ্রাণ যে চিরন্তন তার-ই উদাহরণ হতে পারে লেখকের অসাধারণ লেখনীতে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

সর্বশেষ খবর

সর্বশেষ মন্তব্য