পাহাড়ী জনপদ থেকে উঠে আসা অসীম সাহসী, বিচক্ষণ এ গারো নেতার নাম পূন্য আগিদক সাংমা অথবা পি.এ সাংমা। মাত্র ৪৯ বছর বয়সী ভারতীয় সংসদীয় অভিজ্ঞতা থেকে তিনি একাদশ লোকসভার নির্বাচিত হয়ে আসা একমাত্র গারো সাংসদ।
বলতে গেলে তিনি একেবারে গারো পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নম্র, যোগত্যাসম্পন্ন, সংকল্পময় এবং নিরপেক্ষ নেতা হিসেবে ভারতের লোকসভার স্পিকারের পদে অধিষ্ঠিত হন।
তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত, বন্ধুত্বপূর্ণ, অনানুষ্ঠানিক স্বাধীকার, বুদ্ধিদীপ্ত এবং হাস্যরসে ভরপুরসহ স্বতস্ফুর্ত জ্ঞানদ্বারা দৃঢ়চিত্তে লোকসভা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আসেন। ফলে তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের দ্বারা অল্প সময়ের মধ্যে ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে দলমত নির্বিশেষে একজন যোগ্য এবং নিরপেক্ষতা অর্জন করতে স্বক্ষম হন।
পূন্য আগিদক সাংমা কার্যক্রম
এই সাবেক গারো স্পিকার পূন্য আগিদক সাংমা ১৯ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে উত্তরপূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পশ্চিম গারো পাহাড় জেলার চৌপাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ছোট আদিবাসী গ্রামে বেড়ে ওঠা তরুণ সাংমার জীবনের প্রথম থেকেই উপলব্ধি করেছিলেন উত্থানের জন্য জীবনে তাকে কঠোর সংগ্রাম করতে হবে। মাতৃভাষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি অধ্যবসায়, নম্রতা ও সততার মূল্যবোধকে প্রাধান্য দিয়েছিলন।
তিনি শিখেছিলেন; জীবনের একমাত্র উপায় হলো শিক্ষা। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি সেন্ট আন্থনি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করার পর তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টাস অধ্যয়নের জন্য আসামের ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। পরে তিনি আইন বিষয়ে ডিগ্রী প্রাপ্ত হন।
রাজনীতি
রাজনীতিতে যোগ দেবার আগে পি.এ. সাংমা কর্মজীবনে একজন প্রভাষক, আইনজীবী এবং সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত ছিলেন।
ভারতের কংগ্রস পাটির একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন এবং পাটির শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে
তাঁর অসাধারণ উত্থান-
- ১৯৭৪ সালে মেহেরপুর জেলা যুব কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট
- ১৯৭৫ সালে মেঘালয় রাজ্যে কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক
- ১৯৭৭ সালে সংসদ সদস্য, তুরা আসন
- ১৯৮০ সালে অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির যুগ্ম সচিব
- ১৯৮০ সালে ভারপ্রাপ্ত উপমন্ত্রী, শিল্প
- ১৯৮২ সালে উপমন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
- ১৯৮৪ সালে পুন:নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তুরা আসন
- ১৯৮৪ সালে বাণিজ্য ও সরবরাহের দায়িত্ব নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী
- ১৯৮৪ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
- ১৯৮৬ সালে স্বাধীন চেম্বার, শ্রম রাষ্ট্র মন্ত্রী
- ১৯৮৮ সালে মেহেরপুর প্রতিনিধি
- ১৯৮৮ সালে মেঘালয়ের মূখ্যমন্ত্রী
- ১৯৯০ সালে বিরোধী দলের নেতা, মেঘালয় আইন পরিষদ
- ১৯৯১ সালে তৃতীবার সাংসদ নির্বাচিত, তুরা আসন
- ১৯৯১-৯৩ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কয়লা, স্বাধীন কার্য়্যালয়
- ১৯৯৩-৯৫ সালে রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী, শ্রম, স্বাধীন কার্য়্যালয়
- ১৯৯৫ (ফেব্রুয়ারী-সেপ্টেম্বর) সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, শ্রম
- ১৯৯৫- ৯৬ তথ্য ও সম্প্রচার কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী
- ১৯৯৬ সালে পুন:নির্বাচিত সংসদ, তুরা আসন
- ১৯৯৬-৯৮ লোক সভার স্পিকার। এছাড়াও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন- ব্যবসা উপদেষ্টা কমিটি, বিধি কমিটি, সাধারন উদ্দেশ্য কমিটি, ভারতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রিসাইডিং অফিসারদের সম্মেলনের স্থায়ী কমিটি, সাংবিধানিক ও সংসদীয় স্টাডিজ ইনস্টিটিউট, রাষ্ট্রপতি হিসেবে সমর্থন পেয়েছিলেন ভারতীয় সংসদীয় িদল, জাতীয় সংসদের আন্ত : সংসদীয় ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারী এসোসিয়েশ ভারতীয় শাখা।
- ১৯৯৮ সালে পুন :নির্বাচিত সংসদ, তুরা আসন
- ১৯৯৮ সালে সদস্য, বৈদেশিক বিষয় কমিটি এবং তার উপকমিটি
- ১৯৯৮ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইন্ডিয়ান ইসস্টিটিড অব পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশান
- ১৯৯৮ সালে দসস্য পরামর্শমূলক কমিটি, পররাষ্ট্র বিষক মন্ত্রনালয়
- ১৯৯৯ সালে পুন :নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তুরা আসন
- ১৯৯৯ সালে সদস্য শ্রম ও কল্যাণ কমিটি
- ২০০০ সালে সদস্য, জাতীয় কমিশিন সংবিধানের কাজ পর্য়ালোচনা
- ২০০২ সালে সদস্য, বৈদেশিক বিষয় কমিটি
- ২০০৩ সদস্য, গৃহ বিষয়ক কমিটি
- ২০০৪ সালে পুন:নির্বাচিত সংসদ, তুরা আসন
- ২০০৪ সদস্য, বৈদেশিক বিষয় কমিটি, সদস্য বেসরকারী সদস্যদের বিল ও রিসোলিউশনের কমিটি, সদস্য পরামর্শদাতা কমিটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়
- ২০০৬ এনসিসিপি হিসাবে লোকসভা নির্বাচিত প্রাথী, তুরা আসন
- ২০০৮ সালে সদস্য, মেঘালয় আইন পরিষদ
ভারতে পি.এ. সাংমার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং প্রার্থীতা
পি.এ সাংমাÕর প্রার্থীতা এআইএডিএমকে এবং পাশাপাশি বিজেডি দ্বারা প্রস্তাবিত হয়ে প্রার্থীতা নিশ্চিত হয়। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কংগ্রেসের উপজাতীয় নেতা অরবিন্দ নেতামও পি.এ. সাংমাÕকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়ার পক্ষে সমর্থন দেয়। রাষ্ট্রপতি প্রার্থীতায় প্রনব মূখার্জী নিরঙ্কুস বিজয় অর্জন করেন।
জনাব পি.এ. সাংমা একজন বহুমুখী প্রতিভাধর এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। গৌরবের স্বীকৃতি, সাধীনতা ও মর্য়াদার জন্য তিনি অসামান্য সংসদ সদস্যের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি সকল রাজনৈতিক দলগুলির স্পিকার হিসাবে শপথ গ্রহণ করে উভয় পক্ষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন।
তিনি দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে লোক সভার স্পিকারের কার্য়ালয়ে তাঁর ব্যক্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য এবং অমলিন ছাপ রেখে যান।
তাঁর হাসিখুশি, দ্রুত বিচলিততা, অসীম উৎসাহ, নিখুঁত শৃঙ্খলা ও ধার্মিক বুদ্ধিমত্তায় তিনি একটি জায়গায় পৌচ্ছে গিয়েছিল; সারা দেশ থেকে মানুষ বিরল দক্ষতার প্রশংসা করে ; যার ফলে তিনি হাউস এর কার্য়ধারা পরিচালনা করতে সক্ষম হন। এছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়াতেও, স্পিকার হিসেবে তাঁর মেয়াদ অত্যন্ত প্রশংসা করা হয়।
২০১৪ সালের ৪ঠা মার্চ সকালে দিল্লিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে এই প্রতিভাধর গারো রাজনীতিবিদের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। ২০১৭ সালে ভারত তাঁকে মরণোত্তর পদ্মবিভূষন সম্মানে ভূষিত করেন। তাঁর সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে রেখে গেছেন সুযোগ্য, গুনী রাজনীতিবিদ; যা এখন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন।