বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী গারো ঋতু পঞ্জিকা সপ্তাহে ৭ দিন, ১২ মাস ও ৬ ঋতু রয়েছে । কিন্তু ভাষা গত দিক থেকে উচ্চারণ আলাদা ।
গারো ভাষায় দিন পঞ্জিকা–
- গ্রিসো (Griso) – সোমবার
- আবেসো (Abeso) – মঙ্গলবার
- আইরো (Airo) – বুধবার
- মে’চো (Mecho) – বৃহস্পতিবার
- নারিংসো (Naringso) – শুক্রবার
- সানিচো (Sanicho) – শনিবার
- চিগিচো (Chigicho) – রবিবার
গারো ভাষায় মাসিক পঞ্জিকা-
গারো ভাষায় জা মানে মাস। গারদের মাস শুরু মার্চ মাস থেকে-
- গালমাকজা (Galmak ja) – মার্চ
- মেবাকজা (Mebak ja) – এপ্রিল
- জাগ্রোজা (Jagro ja) – মে
- সগালজা (Sogal ja) – জুন
- জাগাপজা (Jagap ja) – জুলাই
- জামেদকজা (Jamedok ja) – আগস্ট
- মেপাংজা (Mepan ja) – সেপ্টেম্বর
- আনিজা (A’ni ja) – অক্টোবর
- বেরকজা (Berok ja) – নবেম্বর
- কিলকজা (Kilok ja) – ডিসেম্বর
- আউইতজা (Awit ja) – জানুয়ারি
- ওয়াচেংজা (Wacheng ja) – ফেব্রুয়ারি
১) গালমাক জা (Galmak ja):
মার্চ মাস। গারোদের কাছে এটি বছরের প্রথম মাস। অনেকের মতে ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেক এবং মার্চ মাসের অর্ধেক অর্থাৎ বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্রমাস। এ মাসে নববর্ষ উৎসব উদযাপন করা হয়। আসং কোশির (গ্রাম ও জীবন রক্ষক দেবতার) পূজা করা হয়। এ কৃষি সময়কে আসকারী বলা হয়। এ মাসের কৃষি উৎসব হলো ‘দেন বিলসিয়া’ (নতুন কৃষিজমি পরিষ্কারের উৎসব)। গিৎচিপং, মিচিল থাত্তা ইত্যাদি বহু সংখ্যক উৎসব এ মাসে হয়ে থাকে।
২) মেবাকজা (Mebak ja):
এপ্রিল মাস। এটি বৎসরের দ্বিতীয় মাস। এই মাসে কৃষি সময়ের নাম হলো গালমাক বা গেআ কারি। এ মাসে আসিরকা বা আসি অক্কা কৃষ্টি উৎসব হয়। আসি অক্কা অর্থ মন্দ শক্তির প্রভাব দূর করা। এ মাসে পাহাড়ি ধান বোনা হয় এবং সামদিম/সামদুম দাঙা বা আগাছা নিড়ান হয়।
৩) জাগ্রোজা (Jagroja):
জাগ্রোজা গারো পঞ্জিকার বৎসরের তৃতীয় মাস। অর্থাৎ মে মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হলো জাকরাকারি। এ মাসে নতুন কৃষিক্ষেত নিড়ান হয় এবং একে কেন্দ্র করে আ-জাকরা উৎসব পালিত হয়।
৪) সগালজা (Sogalja) :
বৎসরের চতুর্থ মাস; জুন মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হল দাংকারি। এ মাসে দ্বিতীয় বছরে ব্যবহৃত কৃষি ক্ষেত নিড়ান হয়। এর নাম আব্রংদাংআ। এ মাসে ভুট্টা (মিকপ) ফসল তোলা হয় এবং আব্রেং দাঙা উৎসব পালিত হয়।
৫) জাগাপজা (Jagapja) :
জাগাপজা অর্থাৎ জুলাই মাস হচ্ছে গারো পঞ্জিকার বৎসরের পঞ্চম মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হলো মিসিকারি। এ মাসে বামিল (দ্বিতীয় ফসলের জন্য নতুন করে চাষ) এবং আব্রেংরাত্তা হয়। মিসি বা মিসিরি (কাউন), মিখপ (ভুট্টা) তিল এবং অন্যান্য শস্যও এ সময়ে কাটা হয়। এ মাসে ‘মি’ আমুয়া বা রক্ষিমের (শস্য দেবী) পূজা উৎসব হয়।
৬) জামেদকজা (Jamedokja) :
বৎসরের ষষ্ঠ মাস; আগস্ট মাস। এ কৃষি সময়ের নাম হলো মিত্তেকারি। এ মাসে সামাংদাংআ বা আগাছা নিড়ান হয়। এ মাসে গ্রীষ্মকালীন ফসল তোলা শেষ হয় এবং রংচুগালা, গিন্দেগাল্লা বা মিগিত্তাল উৎসব পালিত হয়।
৭) মেপানজা (Mepanja) :
মেপানজা; বৎসরের সপ্তম মাস। ইংরেজী ক্যালেণ্ডার অনুসারে সেপ্টেম্বর মাস।এ কৃষি সময়ের নাম হলো সামপাংকারি। এ মাসে গারোরা আগাছা পরিস্কার করে।
৮) আ’নিজা (Anija) :
বৎসরের অষ্টম মাস; অক্টোবর। এ কৃষি সময়ের নাম ওয়াছি ছাকাতকারি। এ মাসে গারোদের প্রধান উৎসব ওয়ানগালা ও ঘুরে ওয়াতা উৎসব উদ্যাপিত হয়।
৯)বেরকজা (Berokja) :
বৎসরের নবম মাস। অর্থাৎ নবেম্বর মাস। এ মাসে কার্পাস ফসল তোলা হয় এবং আ’বিয়া উৎসব পালিত হতো।
১০) কিলকজা (Kilokja) :
কিলকজা বছরের দশম মাস। ডিসেম্বর মাস। এ মাসে আখিং নকমা (রাজা) আ’দাল (নতুন জমি) চাষের জন্য বিতরণ করা হতো এ মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো উৎসব নেই।
১১) আউইতজা (Awitja) :
বৎসরের একাদশ মাস আউইতজা অর্থাৎ জানুয়ারি মাস। এ মাসে নতুন জমি পরিষ্কার করার কাজ আরম্ভ করা হয় এবং অ’পাতা উৎসব পালন করা হয়।
১২) ওয়াচেংজা (Wachengja) :
এ কৃষি সময়ের নাম ওয়াচেংজা। এটি বছরের বৎসরের দ্বাদশ মাস, ফেব্রুয়ারী মাস। এ মাসে বরাং তৈরি করার সময়।
গারো ঋতু পঞ্জিকা
বালরোরোখারি (Palinkhari) – বসন্তকাল
দিং’খারি (Dingkhari) – গ্রীষ্মকাল
ওয়াচি’খারি (Wachikhari) – বর্ষাকাল
আ’রাক’খারি (A’rakkhari) – শরৎকাল
পিলানখারি (Bandonkhari) – হেমন্তকাল
সিন’খারি (Sinkhari) – শীতকাল