বর্তমান গারোহিলসের সীমারেখা নির্ধারনের আগেই গারোহিলস বা গারোদের ভৌগোলিক অবস্থান পূর্বক তত্ত্ব উপাত্ত বের করে E.T Dalton তাঁর Description Ethonology of Bengal and History of Eastern India গ্রন্থে গারোদের ভৌগলিক সীমারেখা উল্লেখ করেছিলেন।
B.C Allen এর Gaze Tree of Bengal and North East India নামক গ্রন্থে একই কথা বলেছেন।
E.T Dalton এবং B.C Allen এর গ্রন্থ মতে গারোহিলসের সীমারেখা হচ্ছে- উত্তর গোয়ালপাড়া জেলার হাবরাঘাট মেচপাড়া পশ্চিমে কালুমালুপাড়া, কড়াইবাড়ি, সিঙ্গিমারি, পুটিমারি, রৌমারি অর্থাৎ পুরো ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত। দক্ষিণে বর্তমান বাংলাদেশের সাবেক ছয়টি থানা;
যেমন- শেরপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, সুসংদুর্গাপুর, কলমাকান্দা এবং শ্রীবর্দী।
গারোদের ভৌগোলিক অবস্থান
E.T Dalton তাঁর Description Ethonology of Bengal and History of Eastern India গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, গারোহিলসের অবস্থান হচ্ছে উত্তরে ২৫ ডিগ্রী ও ২৬ ডিগ্রীর ভিতরে। গারোহিলসের সাবেক জেলা প্রশাসক মেজর এ প্লেফেয়ার্স প্রায় মত ব্যক্ত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন গারোহিলস জেলার অবস্থান হচ্ছে- উত্তরে ২৫-৯ ডিগ্রী এবং ২৬-১০ ডিগ্রী; পূর্বে Longitude ৮৯-৪৯ এবং ৯১-২ ডিগ্রীর মধ্যে। E.D Dalton আরও উল্লেখ করেছেন, সে সময়ে গারোদের আবাসভূমিতে হিন্দু মুসলিমদের অনুপ্রবেশ ঘটে নি। কিন্তু ব্রিটিশ ভারত সরকার হাবরাঘাট, মেচপাড়া, কালুমালুপাড়া, কড়াইবাড়ি, সিঙ্গিমারি, পুটিমারি, রৌমারি এবং বাংলাদেশের সাবেক ছয়টি থানা; যেমন- শেরপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, সুসংদুর্গাপুর, কলমাকান্দা, শ্রীবর্দী এসব বিশাল অংশ বাইরে রেখে গারোহিলসের মানচিত্র প্রণয়ন করেন ১৮৭২ সালে। মূলত : এ মানচিত্র প্রণয়নই গারোদের দেশ খণ্ড বিখণ্ড ও বিভক্ত করার নীল নকশা।
ইতিহাসের ভাঙা সিড়ি বেয়ে গারোরা আজ তিনটি ভৌগলিক অংশে বসবাস করছে। যেমন- মেঘালয়ের গারোহিলস, দ্বিতীয়ত আসাম রাজ্যের হাবরাঘাট, মেচপাড়া, কালুমালুপাড়া, কড়াইবাড়ি, সিঙ্গিমারি, পুটিমারি, রৌমারি এবং বাংলাদেশে।
গারোদের বসবাস
বর্তমানে গারোরা ভারতের মেঘালয়ের গারোহিলসে, আসাম রাজ্যের কামরূপ, গোয়ালপাড়া এবং কারবি আংলং জেলায়, পশ্চিম বঙ্গের দিনাজপুর, ডার্জিলিং কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে অধিক সংখ্যক গারো বসবাস করে।
ত্রিপুরা রাজ্যের মোট ৪টি জেলায় ত্রিপুরা গারো ইউনিয়ন-এর তথ্য মতে সেখানে গারোর সংখ্যা প্রায় ১৫০০০ অধিক গারো রয়েছে।
এছাড়াও Gan-Chaudhuri, Jagadis. Tripura: The Land and its People. (Delhi: Leeladevi Publications, 1980 গ্রন্থ অনুসারে নাগাল্যাণ্ড রাজ্যেও কিছু সংখ্যক গারো রয়েছে, তবে তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগ গারোই তাদের মাতৃভাষা বলতে পারে না।
উক্ত গ্রন্থের ১০ পৃষ্টায় বলা হয়েছে
Garos are also found in minority number in Nagaland but many of the young generations are unable to speak the garo mother tongue.
বাংলাদেশের অবস্থান
এদিকে বাংলাদেশে বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠি ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, ফুলপুর এবং হালুয়াঘাট উপজেলায়, জামালপুর জেলার সদর উপজেলা এবং শোলাকুড়ি।
শেরপুর জেলার সদর থানা, শ্রীবর্দী, নকলা, নালিতাবাড়ি এবং ঝিনাইগাতি এবং বখশিগঞ্জ উপজেলায়; টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল এবং মধুপুর উপজেলায়, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা উপজেলায়, গাজিপুর জেলার শ্রীপুর, কাওরাইল; সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর, সুনামগঞ্জ উপজেলায়; সিলেট জেলা ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলাতেও কিছু অংশ গারো বসবাস করছে।
জনশ্রুতি রয়েছে, বাংলাদেশের রংপুর জেলাতেও অল্প সংখ্যক গারো রয়েছে, যারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ গারোদের সাথে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে এবং নিজস্ব সমাজ-সংস্কৃতি ভুলে বসে আছে। তবে এর পক্ষে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।