গারোদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা বা আদি ব্যাবস্থার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই বললে চলে । তবে সময়ের সাথে সব কিছু পরিবর্তন হয় এবং বর্তমান বিচার প্রক্রিয়ার নিয়ম এর অনেক পার্থক্য দেখা যায় । এই আর্টিকেল এ আপনি জানতে চলেছেন গারো সমাজের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা নিয়ে।
ছোটখাটো সমস্যা হলে গারোরা অনেক সময়ই নিজেরা নিজেরা মনে করে মেনে নেয় বা অভিভাবকদের নিয়ে বসে মৃদু শাসিয়ে সংশোধন করে ফেলে। একই ভুল বা অপরাধ বারবার করতে থাকলে আমা-মানক বা জিকচল-সাদু মিলে গোপনে বৈঠক করে মিমাংসা করার প্রচেষ্টা চালায়।
গারোদের সামাজিক বিচার ব্যবস্থা
অন্যথায় সমাজের মাথা সংনকমা এবং নেতৃস্থানীয় লোকদের কাছে গিয়ে অভিযোগ দিয়ে আসতে হয়। তারপর সংনকমা নেতৃস্থানীয়দের সাথে পরামর্শ করে দুপক্ষের সাথে অভিযোগ সম্পর্কে কৌশলে তথ্য জানার জন্য কিছুদিন সময় নিয়ে নেন। তারপর যথাশিঘ্র উভয়পক্ষের মতামত নিয়ে বিচারকার্যের দিন, সময় ধার্য করেন।
সালিশের দিনে বাদী-বিবাদী উভয় দলই চ্রা-মানকসহ উপস্থিত হয়। প্রায় বরবারই সংনকমা সভাপতিত্ব করেন, অথবা অবর্তমানে কাউকে বিচার কার্য পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারপর সভাপতি আরও কিছু নেতৃস্থানীয় বা অভিজ্ঞ লোককে বিচারকার্যে তৃতীয়পক্ষ অর্থাৎ নিরপেক্ষ সহযোগী হিসাবে আহ্বান করেন।
এই নির্বাচন প্রক্রিয়াতে বাদী-বিবাদী উভয় দলের পক্ষথেকে মতামত চাওয়া হয়। প্রক্রিয়া এপর্যন্ত হয়ে গেলে ‘বৈঠকের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিবে কি না, বাদী এবং বিবাদী কেউ যেন মিথ্যা স্বাক্ষ্য বা প্রকৃত দোষ অস্বীকার না করে’- এবিষয়ে সভাপতি প্রতিশ্রুতি আদায় করেন এবং নিরপেক্ষ দলের তরফথেকেও বাদী-বিবাদী এবং উপস্থিত জনতার কাছে মতামত ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে নেওয়া হয়।
এবিষয়ে সকলে একমত হওয়ার পর প্রথমে অভিযোগকারীদের পক্ষথেকে সালিশ ডাকার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করে জনসমক্ষে নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রকাশ করতে বলা হয়। তাদের কথা বিস্তারিত অভিযোগের ভিত্তিতে কোন প্রমাণ বা স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য শোনার পরে অভিযুক্তকারীকে প্রকৃত কারণ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়।
এক্ষেত্রে উভয়দলের চ্রা মানকেরা যার যার পক্ষে কথা বলে দোষ স্বীকার বা অস্বীকার, অপরাধের মাত্রা অনুসারে এর শাস্তি এবং প্রয়োজনে অর্থদণ্ড দিতে হলে দর কষাকষি চলতে থাকে। আগেই বলা হয়েছে, গারো সমাজে কেউ অপরাধ করলে এর দায়ভার দোষীকে একা বহন করতে হয় না এবং অর্থদণ্ডও একা দিতে হয় না। এসব কিছুই মানকেরা বহন করে থাকে; একারণে বাদী-বিবাদী দুপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হওয়া খুবই স্বাভাবিক।
তারপর সভাপতি এবং তৃতীয়পক্ষ বা নিরেপেক্ষ দলের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামলে নেয়। এবং সবকিছু হয়ে গেলে দুপক্ষের চ্রা-মানকদেরকে মিলিয়ে দিয়ে মিমাংসাকৃত বিষয়টাকে ভবিষ্যতে কেউ যেন পুনরাবৃত্তি করতে বারন করে দেওয়া হয়। আর কেউ যদি পুনরাবৃত্তি বা পুনরায় আলোচনা, খোঁচাখুঁচি করে তাহলে একারণেই পুনরায় দোষী সাব্যস্ত হবে বা বিচারের সম্মুখীন হয়ে অর্থদণ্ড দিতে হতে পারে।
গারোদের বর্তমান বিচার ব্যবস্থা
এছাড়াও ইদানীংকালে রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারস্থ হতে দেখা যায়।
গারোদের লিখিত আইনী কাঠামো না থাকলেও অলিখিত আইনের প্রতি গারোদের রয়েছে অঘাত বিশ্বাস এবং পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা। সামাজিকভাবে বংশ পরম্পরায় প্রতিপালন করে আসছে যুগের পর যুগ। তেমনিভাবে সহায় সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে ইদানিং প্রথাগত গারো আইনে পুরুষদের প্রতি যেসমস্ত আইনী বাঁধা আছে; (অর্থাৎ প্রথাগত সম্পত্তির অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে) সেসমস্ত আইনগুলো আশু সংস্কার, সংযোজন, বিয়োজন করা যুক্তিসঙ্গত বলে অনেক প্রগতিশীল গারোরা মনে করেন এবং গণতান্ত্রিক মনসিকতার পরিচয় বহন করে। এমন মানবিক প্রশ্নে নিজের মনেই আবার প্রশ্ন জাগে, এ সংশোধনের দায়ভার কার ওপর বর্তায়? কীভাবে প্রথাগত আইন সংশোধন এবং প্রয়োগ সম্ভব ইত্যাদি। ছেলে বা মেয়ে হোক পিতা মাতার দুজনই একই পরিবারের সন্তান সন্তুতি হিসেবেই পরিচিতি যেমন লাভ করে; তেমনি গণতান্ত্রিকভাবে একজন পুরুষ (ছেলে) সে পরিবারে সমধিকার পাওয়ার অধিকার রাখে; কিন্ত তাদের অধিকারহীন বলা যাবে না।